মঙ্গলবার, ১৭ জুলাই, ২০১২

ছায়াসঙ্গী



Sinthyaa Yasmin


কলেজ থেকে ফিরছিলাম বান্ধবীদের সাথে। সকাল থেকেই আজ দিন শুরু হয়েছে খুব উল্টা পাল্টা ভাবে। ঘুম থেকে উঠতে দেরী , রেডি হতে দেরী আর সোনায় সোহাগা জুতা জোড়াও খুজে পাচ্ছিলামনা। মার জুতা টা পরে এসেছিলাম সেটাও এখন আমার সাথে বিরোধিতা করল।


পথের মাঝেই ছিঁড়ে গেছে। তাই হাটতে হচ্ছিল একটু খুড়িয়ে খুড়িয়ে। এতো কাছে বাসা যে রিকশাও যেতে চায় না। তবুও ভাবলাম দেখি আজ যায় কিনা। দাড়িয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ দেখলাম ঠিক রাস্তার উল্টা পাশে খুব সুন্দর ১ টা গাড়ির সামনে ১ টি ছেলে দাড়িয়ে আছে আর এদিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে । রাগে গা টা জ্বলে গেলো। হাসির কি দেখছে তাই বুজলাম না। আমিও হঠাৎ আমার স্বভাব বিরুদ্ধ একটা কাজ করে ফেললাম। ওঁই ছেলেটার দিকে তাকিয়ে ১ টা ভেংচি কাটলাম। ছেলেটা মনে হল খুব অবাক হল। মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছিল। খুব মজা লাগলো আমার। মনের আনন্দে রিকশা করা বাদ দিয়ে আবার হাঁটতে শুরু করলাম।

বাসায় এসে গুনগুন করতে করতে বাথরুম এ ঢুকলাম । অনেক্ষন ধরে শাওয়ার নিলাম । নীচ থেকে হাসির শব্দ আসছে। কিন্তু এটা মাও না ভাইয়াও না। নীচে নেমেতো আমি আকাশ থেকে পরলাম। সেই ছেলেটা ভাইয়া আর ১জন বৃদ্ধ মহিলা বসে গল্প করছে। এই সেরেছে, নিশ্চয়ই আমার বিরুদ্ধে নালিশ করতে এসেছে। ওঁই যে রাস্তায় ভেংচি কাটলাম। ভয়ে ভয়ে মার কাছে গেলাম।


ওরা কে মা? তোর ভাইয়ার সাথে রাস্তায় পরিচয়। ওদের গাড়ি নষ্ট হয়ে গেছে , রাস্তায় দাড়িয়ে ছিল অনেকক্ষণ। ড্রাইভার গেছে মেকানিক খুঁজতে আর ওর দাদী ওয়াশরুম এ যাবে তাই তোর ভাইয়া বাসায় নিয়ে এসেছে।

ও, এই কাহিনী, যাক বাবা বাঁচলাম।আমিতো ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলাম।

ছেলেটার নাম আকাশ। ভাইয়ার সাথে খুব ভাল বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিল। দেশের বাইরে থেকে পড়াশুনা করে এসেছে। এখন বাবার বিজনেস দেখছে। এইসব ভাইয়ার মুখে শুনা।


এরপর অনেকটা সময় গেলো । আমার HSC পরীক্ষা শেষ হল। versity তে ভর্তি হবার জন্য রাত দিন পরছি।


খুব বৃষ্টি হচ্ছিল সে রাতে। আমি বারান্দায় দাড়িয়ে বৃষ্টি দেখছি। ফোন এর শব্দে আমার ধ্যান ভাঙল।

হ্যালো….. কে বলছেন?

আমি আকাশ, ভাল আছো ?


অবাক হব না খুশি হব ঠিক বুজতে পারছিলাম না, তবে ভীষণ ভাল লেগেছিল সেদিন। খুব বেশীক্ষণ কথা হয়নি খুব বেশি কিছুও কথা হয়নি কিন্তু আমার ঘোর যেনও কাটছিলইনা…..


এরপর মাঝে মাঝেই কথা হতো। হঠাৎ ভাইয়া একদিন মা কে বলল আকাশের দাদী খুব অসুস্ত। তুমি যেয়ে একদিন দেখে এসো। মার সাথে আমিও গেলাম। দাদীর মুখে আকাশের ছোট বেলার অনেক কথা শুনলাম। যতই শুনলাম আমার মুগ্ধতা আরও বারতেই লাগলো।

সে রাতে বাসায় এসে ঘুমাতেই পারলাম না। কি হচ্ছে এসব আমার। আমি কি ওর প্রেম এ পরে গেলাম?

বার বার দাদীর কথা গুলো কানে বাজছে। নাতীটা আমার ভীষণ লাজুক,কখন মুখ ফুটে কিছু বলবে না, সবার কথা ভাব্বে কিন্তু নিজের কথা ভাবার সময়ই নাই…

লজ্জার মাথা খেয়ে আমিই একদিন বলে বসলাম…..আমি তোমাকে ভালবাসি।

পুরো ৫ মিনিট ওই পাশে নীরবতা।

কিছু বলছনা না যে… আমাকে কি তোমার ভালো লাগে না?

সত্যি কথা বলব?

অবশ্যই। প্রথম যে দিন তুমি ভেজা চুলে চা এর ট্রে নিয়ে আমার সামনে দাঁড়ালে…..ওই মুহূর্তটার কথা আমি আজও ভুলতে পারি না। চোখ বন্ধ করলেই তোমার ওই মুখ টা আমার সামনে চলে আসে…আমাকে এলোমেলো করে দেয়…কিন্তু…


কিন্তু কি? বল?


কিন্তু আমি তোমাকে আমার এই অগোছালো জীবনের সাথে জড়াতে পারব না। তুমি আমার সম্পর্কে কিছুই জানোনা।


আমি জানতেও চাইনা। আমি জানি আমি তোমাকে ভালবাসি।

সেটা সম্ভভনা। কোন প্রশ্ন করো না।আমি জবাব দিতে পারবনা। শুধু বলব ভাল থেকো আর আমাকে ভুলে যাও…..


না, সেদিন কোন প্রশ্ন করিনি আমি। নিজের কষ্টটা বুকে চেপে রেখে অনেক নির্ঘুম রাত পার করেছি আর ভেবেছি, আমার মতো ১টা সাধারন মেয়ে কে ভাল লাগতে হবে এমনত কোন কথা নাই……

এরপর একদিন দাদীর অসুখের খবর শুনে দেখতে গিয়েছিলাম।মা যেতে পারেনি,আমি একাই গেয়েছিলাম। আমাকে দেখে দাদী যেন স্বর্গ হাতে পেলো।


মনে মনে আমি এটাই চাইছিলাম মা, তুমি যেন একা আসো। তোমার সাথে আমার কিছু কথা ছিল।


আমার আকাশ টা খুব একা, ওকে তুমি একটু দেখবে মা?

আমি ঠিক বুজলাম না দাদী।

আকাশ আমাকে বলেছে যে ও তোমাকে পছন্দ করে কিন্তু ওর অতীত এর কারনে ও তোমাকে না করে দিয়েছে…


বছর পাঁচেক আগে আমি ওকে আমার পছন্দের একটা মেয়ের সাথে বিয়ে দিয়েছিলাম কিন্তু এক মাসের মাথায় অ্যাকসিডেন্ট এ মেয়ে টা মারা যায়। ভীষণ ভেঙ্গে পড়েছিল ও…. এখন অনেকটা স্বাভাবিক কিন্তু জীবনে আর বিয়ে করবেনা এই পণ করে বসে আছে। তুমিই বল মা,আমি আর কই দিন, ওকে পরে কে দেখবে? আমিতো মড়েও শান্তি পাবোনা...


ওর প্রতি ভাললাগা আমার আরও বেড়ে গেল। বাসায় ফিরে ১ টা মেসেজ পাঠালাম। কাল বিকেল ৫ টায় নদীর পাড়ে আমি তোমার সাথে দেখা করতে চাই। কোন প্রশ্ন করবোনা, শুধু ১ বার দেখতে চাই।

খুব সুন্দর করে সাজলাম, লাল শাড়ি পড়লাম আর চুল গুলো ভেজা...

দূর থেকে দেখলাম গাড়িতে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে।


নিঃশব্দে পাশে যেয়ে দাঁড়ালাম। কেনো জানি চোখ ভিজে যাচ্ছিল বার বার ।

অবাক হয়ে ও আমাকে দেখছিল...


আমি জেনে গেছি সব, তোমার প্রতি ভাল লাগা একটুও কমেনি বরং বেড়েছে বহুগুন… আমি ছায়ার মতো তোমাকে আগলে রাখতে চাই...এখনও কি তুমি আমায় ফিরিয়ে দেবে?


ও আমাকে কাছে টেনে নিল, চোখের পানি মুছে দিল, একটি কথাও বলল না শুধু গভীর আবেগে আমাকে জড়িয়ে ধরলন

-এই পোস্টির লিঙ্ক


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন