শনিবার, ৭ জুলাই, ২০১২

তোমায় আমি ভালোবাসা জানাবো , সুখের আঙ্গিনায় ।

ঠাশ !!!!! ঠাশ......।

জীবনে এই প্রথম কোন মেয়ের হাতে থাপ্পড় খেয়ে হতবুদ্ধি হয়ে গেল স্বপ্নিল , তাও একটা না । পরপর দুই গালে দুইটা । চোখ গোল গোল করে তাকিয়ে থাকলো অহনার দিকে । প্রায় এক মিনিট লাগলো তার মস্তিষ্ক রিস্টার্ট নিতে । যখন নিলো , তখন প্রায় কেঁদেই দিচ্ছিল । অনেক কষ্টে কান্না থামালেও চোখটা পানিতে ভরে উঠলো । জীবনে সে কখনো মার খায়নি , এমনকি আম্মুর হাতেও । বলতে গেলে এই প্রথম । অহনা তার ছোটবেলার বন্ধু , পাশাপাশি ফ্ল্যাটে থাকে । বলতে গেলে ফোকলা বয়স থেকে একসাথে বেড়ে ওঠা তাদের । একই স্কুল , একই কলেজ , এখন ভর্তির জন্য একই কোচিং সেন্টারে পড়ছে । বন্ধুর বাইরে অহনাকে যেমন কখনো আলাদা করে লক্ষ করেনি , তেমনি অহনাও আলাদাভাবে লক্ষ করেনি তাকে । পড়াশুনার প্রবল চাপে শৈশব আর কৈশোর কখন যে চলে গেছে লক্ষই করেনি । ঠিকঠাক চলছিল সব , মাঝখানে গিট্টু লাগানোর জন্য উদয় হল ফিচলা বুদ্ধির শাহিন ।
সারাদিন স্বপ্নিলের কানের কাছে ঘেনঘেন করতে লাগল অহনা নাকি আসলে তার প্রেমিকা , তারা নাকি আসলে পরস্পরকে ভালোবাসে , তারা নাকি নিজেরাই জানেনা......... লাব লাব লাব । প্রথমদিকে পাত্তা না দিলেও শাহিনের একটানা ঘ্যানঘ্যানানিতে স্বপ্নিলেরও মনে হতে লাগল “ তাই তো , কথা সত্যি ’’ । আসলেই আমরা একজন আরেকজনকে ভালোবাসি । এখন কি করা উচিত ? ফিচলা শাহিন বুদ্ধি দিল “খুব সহজ , জড়িয়ে ধরে একটা পাপ্পি দিয়ে দে । ইমরান হাশমির ফিল্মে দেখিস না , পাপ্পি দিলেই মেয়েরা গলে যায় ’’ । ভয় পেয়ে গেল স্বপ্নিল “ যদি আম্মুর কাছে বিচার দেয় ’’ ? “আরে নাহ..... কি যে বলিস ’’ । এই নিয়ে কয়েকদিন জল্পনা কল্পনা করে অবশেষে বুকে মত্ত হাতির সাহস নিয়ে অহনাকে পাপ্পি দিয়ে বসলো স্বপ্নিল । ফিরতি পুরস্কার স্বরূপ দুই গালে দুই থাপ্পড় ।
দুই গালে দুই হাত দিয়ে স্বপ্নিলের প্রশ্ন...
মারলি কেন ?
তুই এমন করলি কেন ?
আমরা দুজন দুজনকে ভালোবাসি , তাই ।
( ঠাশ...... এবার কেঁদে ফেলল স্বপ্নিল)
কে বলেছে তোকে ?
শাহিন বলেছে ।
তুই একটা গাধা আর শাহিন একটা গরু । তোর মতো অসভ্য গাধাকে ভালোবাসতে বয়েই গেছে আমার । আর কখনো এইসব উল্টাপাল্টা করবি , সোজা আন্টির কাছে বিচার দিব । বুঝলি ? আমার থেকে একশো হাত দূরে থাকবি । মনে থাকে যেন ...... ।
হুম......বুঝছি , মনে থাকবে ।
( স্বপ্নিলের প্রাথমিক প্রেমকাহিনী এখানেই শেষ , অবশ্য যদি একে প্রেমকাহিনী বলা যায় । )

( দেড় বছর পর )---- স্বপ্নিল এখন অনেক বদলেছে । কুয়েটে পড়তে যেয়ে বাসার বাইরে থাকায় বাস্তবতা বোধ অনেক বেড়েছে , অনেক স্মার্ট হয়েছে । অহনা পড়ে রংপুর মেডিক্যালে । দুজনে দেখা প্রায় হয়না বলতে গেলে । পাপ্পির ঘটনার পর থেকে স্বপ্নিল অনেক বদলে গিয়েছিল । অহনা বিষয়টা খুব বেশি সিরিয়াসলি না নিলেও স্বপ্নিলের ভেতরে অপমান আর গ্লানির এক ছোট্ট বীজ জন্ম নিয়েছিল । সময়ের সাথে স্বপ্নিলের ছেলেমানুষি কমতে থাকে আর সেই বীজ ডালপালা মেলে বিশাল এক বৃক্ষে রূপে বাড়তে থাকে । যার ফলে দুজনের ভেতর দূরত্বের জন্ম হয় । স্বপ্নিলের অনিচ্ছার কারণে আস্তে আস্তে যোগাযোগ কমতে থাকে , একসময় প্রায় বন্ধ হয়ে যায় । এর ভেতরে আবার বেশ কয়েকটি বড় বড় ঝগড়া হয়েছে দুজনের মাঝে ।

কথা না বলে কাটল প্রায় ছয় মাস । ঈদ এর বন্ধ । বাসার ছাদে একদিন দেখা দুজনের । স্বপ্নিল গিটার বাজাচ্ছিল , আর অহনা একটু দূরে চুপ করে রেলিঙের উপর বসে ছিল । কি মনেকরে অহনা এসে পাশে বসলো । অল্পক্ষণ দুজনেই চুপ , অহনা বুঝল স্বপ্নিল নিজে থেকে কথা বলবে না । তাই নিজেই প্রথমে কথা বলার সিদ্ধান্ত নিলো ।
ভালো আছিস ?
হুম ?
ফোন দিস না কেন ?
সময় পাই না ।
এত কিসের ব্যস্ততা ? প্রেমটেম করিস ?
আমার সাথে আর কে প্রেম করবে ? আমি অসভ্য , গাধা না ? ( নিজের গালে হাত বুলিয়ে বুলিয়ে উত্তর দেয় স্বপ্নিল )
স্বপ্নিলের ইঙ্গিত বুঝতে পেরে মন খারাপ হয়ে যায় অহনার । চুপ করে যায় সে । আর কিছু বলতে পারেনা । টপ টপ করে কয়েকটি উষ্ণ ফোঁটা ঝরে পড়ে রেলিঙে । পানিভর্তি টলটলে চোখে একবার স্বপ্নিলের দিকে তাকিয়ে চুপচাপ নিচে চলে যায় সে । অহনার চলে যাওয়ার পথে তাকিয়ে হটাত করে খুব খারাপ লাগে স্বপ্নিলের । অনেকদিনের বন্ধুত্বের অনেক সৃতি চোখের সামনে ভেসে আসে । যত ভাবতে থাকে , অপরাধবোধ তত বাড়তে থাকে । নির্ঘুম সারারাত ছটফট করে শেষরাতের দিকে বুঝতে পারে স্বপ্নিল , সত্যিই অহনাকে ভালোবাসে সে । তার জীবনের অনেকটাই জুড়ে রয়েছে অহনা । নিজের মনের কাছ থেকে উত্তরটার নিশ্চয়তা পাওয়ার পর প্রশান্তিতে ঘুমিয়ে পড়ে সে । শান্তির ঘুম ।

পরের দিন স্বপ্নিলের দুপুরে দাওয়াত ছিল অহনাদের বাসায় । ড্রয়িংরুমে বসে ছিল সে । তার আর অহনার আম্মু রান্নাঘরে রান্নার পাশাপাশি গল্প করছেন ।খুব ধীরে ধীরে অহনা এসে পাশে দাঁড়াল ।
একটু আমার ঘরে আসবি ?
কেন ?
আয় না , প্লিজ ।
অহনার পিছনে পিছনে তার ঘরে ঢুকতেই স্বপ্নিলকে অবাক করে দিয়ে হটাত এক পাপ্পি দিয়ে বসলো অহনা । স্বপ্নিলের ঘোর কাটতে না কাটতেই আবার বিশাল এক পাপ্পি । তারপর স্বপ্নিলকে জড়িয়ে ধরে অহনার সে কি কান্না । একেবারে ভাসিয়ে দেয়ার মতো অবস্থা । অনেক্ষন ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদল অহনা আর বার বার ক্ষমা চাইল স্বপ্নিলের কাছে । হাঁসি ফুটল স্বপ্নিলের মুখে । মুখে তার বিটলামি এক হাঁসি ফুটে উঠলো , প্রশ্ন করল অহনাকে.........।

পাপ্পি দিলি কেন ?
তোকে ভালোবাসি তাই ।
এবার আমি থাপ্পড় দেই ?
দে না...... দে...
তবে মুখ তোল , থাপ্পড়টা দেই ।
মুখ তুলে তাকালো অহনা ।
কান্না ভেজা গালটা নিজ হাতে মুছে দিয়ে দুই হাতে অহনার মুখটা তুলে ধরল স্বপ্নিল । তারপর ফিসফিস করে খুব বেশি মোলায়েম স্বরে বলল “ আমি তোর মতো আহাম্মক না , যাকে ভালোবাসি তার গালে থাপ্পড় দিব । তবে হ্যাঁ , যদি এখনই আরেকটা ছোট্ট পাপ্পি না দিস তবে আন্টিকে বিচার নির্ঘাত দিব ’’
হিহিহিহি... যা ভাগ , বদমাশ...... পারবো না ।
.........................................................
( ঘরে তখন মৃদু স্বরে গান চলছিলো......)
নির্ভাবনায়...... রাখবো তোমায়...।
বহুদূর চল যাই......
ঠিকানা হারানো পথে , ঘুরবো যে একসাথে ।
তোমায় আমি ভালোবাসা জানাবো , সুখের আঙ্গিনায় ।
Happy Ending is always sweet…. Isn’t it ?
...........................................................

By------দেবাশীষ মজুমদার সাগন

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন